top of page
Search

ইসলাম এবং রাজনীতিঃ সংকট এবং সম্ভাবনা ১

সাম্প্রতিক কালে একটি প্রশ্ন আসছে অনেকের কাছ থেকে। ইসলামী রাজনীতি কি আসলে ব্যর্থ হয়েছে বা হচ্ছে?

মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের উপর ক্রাকডাউন, সৌদি আরব এবং আরও কিছু আরব দেশে কোণঠাসা, মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইবরাহীম কে নিয়ে পুতুল খেলা, বাংলাদেশে জামায়াতের ইসলামীর উপর ক্র্যাক ডাউন, হেফাজত খেলাফত, ২০১৩ সালের ৫ মের শাপলা চত্বর, আল্লামা শফি, আনাস মাদানি নাটক, মাওলানা মামুনুল হক নাটক, সার্বিক ঘটনা প্রবাহে, অনেকেই প্রশ্ন রাখছেন এটা কি ইসলামী রাজনীতির বার্থতা না এর পেছনে রয়েছে অন্য কোন কারণ। 

দীর্ঘদিন পর মিশরে গন্তান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হন মসুলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল মুসলিমুন নেতা ডঃ মুরসি, ২০১৩ সালে মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল মুসলেমিন এর নেতা মুহাম্মাদ মুরসিকে সরিয়ে দিয়ে জেনারেল সিসি ক্ষমতা দখল করেন, এবং মুরসি সহ হাজার হাজার ব্রাদারহুড নেতা কর্মীকে হত্যা ও জেল দেয়া হয়, এবং ২০১৯ সালে মুহাম্মাদ মুরসি কারাবরণ অবস্থায় জেলেই মৃত্যু বরণ করেন। স্বাভাবিকভাবে এসব এবং অনেকগুলো কারণে মিশরের সি সির উপর ইসলামী রাজনীতিপন্থী মুসলমানগন খুবই বেদনাহত এবং ক্ষুব্ধ, কিন্তু মজার ব্যাপার হল এ বছর ২০২১ সালের মে মাসের ইসরাইল এবং ফিলিস্তিন এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে দূতিয়ালি করছেন এই আব্দুল ফাত্তাহ সি সি। শুধু তাই নয়

মালয়েশিয়ার সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহীম ছাত্র নেতা যুব নেতা থেকে মাহাতির মোহাম্মাদ এর উপপ্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হন, তারপর মাহাথিরের সাথে বিরোধ হতে হতে আনোয়ার ইবরাহীমকে জেলে যেতে হয়। তারপর ছাড়া পান, তারপর এক সময়ের বন্ধু এবং নেতা, তারপর আবার শক্র তারপর আবার বন্ধু হন একত্রে আবার জোট করে করেন, তারপর আবার বিশ্বাসঘাতকতার প্রশ্ন আসে এ ধরনের নানা ধরনের নানা রকম নাটক। আনোয়ার ইবরাহীম প্রধানমন্ত্রী হয় হয় করে আজো হলেন না। 

মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক সার্বিক প্রেক্ষাপটে কিছুদিন আগে আমি ফোন করেছিলাম আনোয়ার ইবরাহীমের সাবেক একজন সমর্থক কে, তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, এই পরিস্থিতিতে আনোয়ার ইবরাহীম এর সমর্থক রা কি ভাবছেন, তাতে শুনতে পেলাম যে আনোয়ার ইবরাহীম এর সমর্থকরা এখন তাঁর উপর এখন ক্ষুব্ধ এবং বীতশ্রদ্ধ। তাঁদের কথা হল, তুমি (আনোয়ার) এত বছর রাজনীতি কর, তোমার বিরুদ্ধে এত বড় ষড়যন্ত্র হল অথচ তুমি টের পেলানা ??!! বলা বাহুল্য যাকে ফোন করেছিলাম এবং কথা বলেছি তিনি নিজে দীর্ঘ দিন। আনোয়ার ইবরাহীম এর অনুসারী ছিলেন। 

ইসলামী রাজনীতি সফল কিংবা ব্যর্থ সেটা আলোচনা করার আগে সংক্ষেপে দুটো বিষয় আলোচনা করা দরকার 

(১) ইসলামী রাজনীতি বলতে আসলে ইসলামী রাজনীতিবিদরা কি বুঝান

(২) ইসলাম পন্থীদের মাঝে তাত্ত্বিক ভিন্নতা এবং তাঁদের রাজনৈতিক সম্পর্ক 

ইসলামী রাজনীতি বলতে আসলে কি বুঝানো হয়।

ইসলামী রাজনীতিটা আসলে কি? আমরা যদি শাব্দিক অর্থের দিকে তাকাই তাহলে বাংলায় রাজনীতি, ইংরেজিতে পলিটিক্স, আরবিতে সিয়াসত। কেউ কেউ বলেন রাজনীতি হল রাজার নীতি। তারপর আবার প্রশ্ন আসে রাজনীতি যে রাজার নীতি এ কথাটা কোথা হতে এসেছে। রাজনীতি যদি রাজার নীতি হয় তখন প্রশ্ন আসে, তাহলে রাজনীতিটা রাজতন্ত্রের নীতি? প্রজাদের উপর রাজার চাপিয়ে দেয়া নীতি? নাকি রাজাদের নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করার যে নীতি সেটা রাজনীতি?

রাজনীতি শব্দের ইংরেজি হল পলিটিক্স (Politics)। আমরা যদি পলিটিক্স এর সংজ্ঞা দেখি তখন প্লাটোর রিপাবলিক, প্ল্যটো, এরিস্টটল এর পলিটিকাল ফিলসফী বা রাজনৈতিক দর্শন দেখি। প্রাচীন চীনের কনফুসিয়াসের মতাদর্শ দেখি। কিংবা খ্রিস্টধর্ম ভিত্তিক পাশ্চাত্যের সেইন্ট অগাস্টিন এর খ্রিস্টীয় দর্শন দেখি। পাশ্চাত্যের রাজনীতি বা পলিটিক্স কে আমরা এক কথায় ডেমক্রাসি হিসাবে বুঝি। তবে পলিটিক্স এর কথা বলতে গেলে ম্যাকিয়াভেলিয়ান পলিটিক্স কে কোন ক্রমেই বিচ্ছেদ্য ভবাবার সুযোগ নাই। 

রাজনীতির আরবি যে সিয়াসাত, সিয়াসাত শব্দটি কোরানে খুঁজে পাওয়া যায় না। 

ইসলামি রাজনীতির দারশিনিক ভিত্তি হল আল্লাহ হুকুমাত কায়েম বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। 

ইসলামী রাজনীতির দর্শন বলতে সর্ব প্রথম এবং সর্ব প্রধান ভাবে দেখি আল্লার হুকুমাত কায়েম এর কথা, যে দর্শনটা মূলত নেয়া হয়েছে পবিত্র কোরানের সুরা ইউসুফ ৪০ নম্বর আয়াত এবং সুরা মায়েদার 44-৪৫, থেকে। 

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, আল্লাহর হুকুমাত বা খিলাফাত কায়েমের পদ্ধতি কি হবে? কিংবা সেটাই কি ইসলামী রাজনীতি? কিংবা খেলাফত বা হুকুমাত প্রতিষ্ঠা কি রাজনীতির মাধ্যমেই করতে হবে সেটা কোরআন হাদিসে যা আছে তা নিয়ে ভিন্নজন ভিন্ন ব্যখ্যা প্রদান করেন এবং ভিন্ন মত পোষণ করেন। 

স্বভাবতই কথা আসে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর যে আন্দোলন ছিল, যে সংগ্রাম এমনকি যুদ্ধ বিগ্রহ ছিল তা কি প্রচলিত রাজনীতির সাথে কোথায় কোথায় সামঞ্জস্যশীল, আর কথায় ভিন্নতা রয়েছে? বা পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতির সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যশিল বা কতটুকু সাংঘরশিক সেটাও একটা প্রশ্ন। 

ইমাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর শরিয়তি রাজনীতি (السياسة الشرعية ) বইতে ইসলামী রাজিনীতি বলতে মূলত আমানতদারী এবং আদল, ইনসাফ বা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করাকে ইসলামী রাজনীতির মূল কথা হিসাবে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি সুরা হাদিদের ২৫ নম্বর আয়াত উল্লেখ করে বলেছেন যে ইসলাম রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব কল্যাণ। ইবনে তাইমিয়া পবিত্র কোরানের সুরা নিসা ৫৮-৫৯ আয়াতের ভিত্তিতে। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মূল আরবি বইটি মাওলানা জুলফিকার আহমদ কিসমতি “শরিয়তী রাষ্ট্র ব্যবস্থা” শিরনামে অনুবাদ করেছেন। (মূল আরবি বই (السياسة الشرعية ) বাংলা অনুবাদ শরীয়তী রাষ্ট্র ব্যাবস্থা)

ইমাম শাতেবি যদিও ইসলামী রাজনীতির কোন কথা বলেন নি, তবে তিনি সমাজ কল্যাণ নিয়ে বিশাল গ্রন্থের ভলিউম রচনা করেছেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আল মুয়াফাকাত ( الموافقات) গ্রন্থে “আল মাকাসিদ আশ্ শারিয়াহ” সঙ্কলনে বলতে চেয়েছেন শরিয়তের মূল উদ্দেশেই হল মানব কল্যাণ করা, মানুষের সমস্যার সমাধান করা।বাংলায় আমরা যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এই ধরনের কয়েকটি মৌলিক মানবিক প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করেছি, ইমাম শাতেবি মানব জীবনের প্রয়োজন কে ৩টি ভাগে ভাগ করেছেন 

(১) জরুরিয়াত বা একান্ত প্রয়জনীয় ( ضروريات) 

(২) হাজিয়াত প্রয়জন আছে তবে না হলেও চলে (حاجيات )

(৩)অপ্রয়জনীয় বিলাস দ্রব্য। (تحسينيات ) 

ইমাম শাতেবির দৃষ্টিতে জরুরিয়াত বা একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে পূর্ণ করা সমাজ এবং রাষ্ট্র সকলের দায়িত্ব। 

হুকুমাত সম্পর্কিত (ان الحكم الا لله ) কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে মওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদি রহঃ “ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ” বইতে লিখেছেন “ইসলামি রাষ্ট্রনীতির প্রথম কথা এই যে, আইন রচনা, নির্দেশ দান ও বিধান প্রণয়নের কোন অধিকারী মানুষের নাই।“ মাওলানা মওদুদি আরও বলেন আইন প্রণয়ন করার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই আছে (দ্রষ্টব্য ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ, রাষ্ট্রনীতির গোড়ার কথা অনুচ্ছেদ, পৃষ্ঠা ১৯) , এবং ইসলামী রাষ্ট্র ও সংবিধান, মূল উর্দু বই (إسلامي رياست)পৃষ্ঠা 336),

ইসলামি রাষ্ট্রের স্বরূপ আলোচনা করতে গিয়ে মাওলানা মওদুদি আরও বলেন “এটা (ইসলামী রাজনীতি/রাষ্ট্রনীতি) আর যাই হোক গণতন্ত্র (Democracy) কিছুতেই নয়। কারণ যে ধরনের শাসনতন্ত্রে দেশে নাগরিকদের নিরঙ্কুশ প্রভুত্বের অধিকার স্বীকৃত হয়, রাজনৈতিক ভাষায় তাকে গণতন্ত্র বলে। ইসলামী শাসন ব্যাবস্থাকে গণতন্ত্র বলা যেতে পারে না। (প্রাগুক্ত পৃষ্ঠা ২১) 

ইসলামী রাজনীতি বলতে কেউ কেউ আবার খিলাফত এর কথা বলেন। খেলাফতের কথা অনেকেই বলেছেন, মাওলানা মওদুদি তাঁর খেলাফত ও রাজতন্ত্র (উর্দু خلافة و ملكيت) বইতে এ ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা করেন। খেলাফতের প্রবক্তাদের মূল ভিত্তি হল পবিত্র কোরানের সুরা বাকারার ৩০ আয়াত; নুহ ৬৯ এবং ৭৪; সুরা ইউনুস ১৪; সুরা সাদ এর ২৬ নম্বর আয়াতের ভিত্তিতে। 

এখন প্রশ্ন হল, রাজনীতি, পলিটিক্স, সিয়াসত আর খিলাফত আর হুকুমাত কি সমান? কিংবা খিলাফত বা আল্লাহর হুকুমাত প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজনীতির প্রয়োজন কতটুকু বা কিভাবে। রাজনীতির প্রয়োজন যদি থাকেই তবে কোন রাজনীতি? পাশ্চাত্যের রাজনীতি বা পলিটিক্স? যেখানে ডেমোক্রাসি বা গণতন্ত্র হল সর্ব প্রথম এবং সর্ব প্রধান মাধ্যম, খিলাফত বা হুকুমত কি ডেমোক্রাসির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হবে?

তারপর প্রশ্ন থেকে যায় রাজনীতি হবে রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে ফুলটাইম নেতাদের দিয়ে নাকি রাজনীতি হবে ফ্রী ল্যাঞ্চ এবং ইস্যুয়ে ভিত্তিক বা আন্দোলন ভিত্তিক। 

ইসলামের নাম দিয়ে রাজনৈতিক দল যদি গঠন করতেই হয়, সে রাজনৈতিক দলের খেলাফত বা হুকুমাত কায়েমের পদ্ধতি বা পন্থা কি হবে। পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে নাকি বিপ্লব কিংবা সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে। বা অন্য কোন পথে। (চলবে )

 

 
 
 

Recent Posts

See All
এখানে মিষ্টি বিক্রি হয়।

ঈশপের  সেই বিখ্যাত গল্পটি দিয়েই আজকের সম্পাদকীয়টা শুরু করা যাক।  এক বয়স্ক পিতা বাজারে যাবেন এতে তাঁর কিশোর ছেলে বায়নাধরেছে সেও বাবার সাথে...

 
 
 

Comments


Contact

Never Miss a Lecture

Add your text

  • Linkedin
  • Facebook
  • Twitter
  • Instagram
  • YouTube
  • Amazon
White Structure

Never Miss a Lecture

Add your text

_London trip in Bangla.pdf

bottom of page