top of page
Search

তারাবী ২০ না ৮, নাকি ১১, না ২৩

আলী হাসান ওসামা এবং ব্রাদার রাহুল নামে ভারতীয় এক বক্তার ডিবেটের প্রচার দেখে আসছিলাম বেশ

কয়েকদিন থেকে। বিষয় হলো তারাবী নামাজ ৮ রাকাত নাকি ২০ রাকাত। এ বিষয় নিয়ে কথা বলা বা

বিতর্ক করাটাকে আমি সবসময় একটা অপ্রয়োজনীয় কাজ এবং সময় অপচয় মনে করে আসছি। কারণ,

তারাবী ২০ না ৮, নাকি ১১, না ২৩, শবে বরাত পালন সওয়াব নাকি বেশ্যলয়ে যাবার যেয়ে খারাপ, আমীন

জোরে বলবেন নাকি আস্তে, হাত নাভির উপরে নাকি নীচে এ সবগুলো বিতর্ক একই সুত্রে গাঁথা। অনেক

আগে ২০০৪ বা ২০০৫ এর দিকে আমি চাঁদ দেখা বিতর্ক তথা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করা নিয়ে এক

নিবন্ধ লিখেছিলাম সেখানে লিখেছিলাম, এই বিষয়গুলো যতটুকু না কোরআন হাদীস বা ফিকহের সাথে

সর্ম্পক তার চেয়ে বেশী সর্ম্পক হলো কে কোন পন্থী। সেসময় আমি লিখেছিলাম, আমি যদি আপনাকে

চিনি এবং আপনি কোন পন্থি সেটা জানি তাহলে আমি অবলিলায় বলে দিতে পারবো আপনি আগামি

রমজান কবে শুরু করবেন এবং ঈদ কবে করবেন। আমি গনক বা ভবিষ্যত বক্তা নই, এটা বলতে পারেন যোগ

বিয়োগের মত। যেমন মনে করুন একজন বক্তা যদি জামাত পন্থী হন, তাহলে তাঁর বক্তৃতা যতক্ষণই হোক,

তাঁর বক্তৃতার সারমর্ম হলো ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া মুক্তি নাই। আবার একজন বক্তা যদি সুফী পন্থী হোন তাঁর

বক্তব্যের শেষ কথা হল সুফীতত্ব। সুতরাং তারাবীর নামাজ ৮ রাকাত নাকি ২০ রাকাত সেটা নির্ভও করবে

আপনি কোন পন্থী সেটার উপর। সেটা নিয়ে আলোচনা করতে যাওয়া সময় নষ্ট।

যাক আমার মনে করা নিয়ে স্বভাবতই সংষিøষ্ট কারো মাথা ব্যথা নাই। বিতর্কটা যথাযথ নিয়মেই

হয়েছে। আজ সকালে ইউটিউবে বির্তকটি মাঝে মধ্যে টেনে টুনে দেখলাম। ব্রাদার রাহুল নামের এই

মিস্টার রাহুলের কিছু বক্তব্য আমি আগে শুনেছি। বলা যায় তাঁকে আমি চিনি। জানি না, ব্রাদার কি

আসলেই তাঁর নামের অংশ কিনা নাকি আধুনিক মনা তরুণ প্রজন্মের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করার

একটা কেীশল? যেমন অনেকে গাল নাক বাকা করে দু চারটা ইংলিশ বাংলিশ শব্দ বাজার বাজিমাত করেন।

এই মিস্টার রাহুলই একবার বলেছিলেন সকল নবী নাকি ইহুদী ছিলেন, একজন মানুষ কত মূর্খ হলে এমন

অবার্চিন কথা বলতে পারেন। তিনি যদি কথাটা অন্যের শিখিয়ে দেয়া বুলি বোকার মত নিজের হয়েই বলে

থাকেন তাহলে আমার কথা হলো, তিনি এমন সহজ একটা কথা বুঝলেন না!

মিস্টার রাহুলের বেশ কিছু আলোচনা শুনে আমি বুঝতে পেরেছি যে, তিনি কোন আলেম নন। এমন কি

তিনি সহী করে কোরআন ও তিলাওয়াত করতে পারে ন না। হ্যঁ, আমি তাঁর কোরআন পড়া শুনেই তা বলেছি।

আমার ৯ বছরের মেয়ে রাহমা যতটুকু তাজবীদ জানেন তিনি মনে হচ্ছে ততটুকু তাজবীদ ও জানেন না।

আলেমদের মধ্যে যাঁরা তাজবীদ জানেন দয়া করে মিস্টার রাহুলের তেলাওয়াত মনযোগ দিয়ে শুনবেন। মিস্টার রাহুল

কোন আলেম নয় কেন বললাম, তিনি হয়তো তাঁদের গুরু শায়েখদেও কিছু গদবাধাঁ বই মুখস্ত করেছেন,

কিন্তু আলেম হবার জন্য যে পড়াশোনা দরকার সেটা তাঁর নাই। তিনি হয়তো তাঁর মতবাদের একজন ভাল দায়ী

হতে পারেন কিন্তু তিনি আলেম নন। আমার দুই ভাতিজা হাটহাজারী থেকে ফারেগ হাফেজ মুফতি। এক

ভাগিনা নরশিংদি জামেয়া কাসেমীয়া থেকে এ প্লাস নিয়ে পাশ। আমি যখন বিদেশে পাড়ী জমাই তখন

এরা সবাই ছোট ছিল। কয়েকবছর আগে দেশে এসে জোবায়েরের সাথে দেখা জোবায়ের লেখাপড়ায় ভাল,

এক মাদ্রাসায় জালালাইন পড়ায়, জোবায়েকে প্রথমেই প্রশ্ন করলাম, নুরুল আনোয়ার বুঝে কিনা,

আমার প্র্রশ্ন শুনে জোবায়ের থতথত খেয়ে গেল, চাচা আমেরিকা থেকে এসেছে আমার সাথে ইংলিশ

বলবে তা না করে আমাকে বলে আমি নুরুল আনোয়ার বুঝি কিনা। মুল কথা হলো, একজন হুজুর

বিশ^বিখ্যাত হতে পারেন, দায়ী হতে পারেন, নেতা হতে পারেন, কিন্তু অসুল না জানলে আলেম হতে পারেন

না।

প্রায় মাস খানেক আগে আমি একটি প্রশ্ন রেখে ফেইসবুকে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম, আমার

প্রশ্নটা ছিল ”সমস্যটা কোথায়”, আমাদের আলেম বা দায়ীদের মধ্যে কয়েকদিন পরপর অহেতুক বিতর্ক,

একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কারণটা কি? সমস্যাটা আসলে কোথায়? আমি আসলে পাঠকদের অভিমত

জানতে চেয়েছিলাম। খুব একটা মতামত আমি পাইনি। তবে অল্প দু চারটি মতামতের মধ্যে একটি মত

আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমার অনেকটা ঘনিষ্ঠ বন্ধু, মালয়েশীয়া ইন্টারন্যশনাল ইসলামি

ইউনির্ভাসিটির সহপাঠি বর্তমানে চট্রগ্রাম আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ^বিদ্যলয়ের অধ্যপক

মনিরুল ইসলাম ভাই লিখেছেন, ”পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রফেশনেরই র্সাটিফিকেশন দরকার হয়।”

আমাদের দেশের এই বক্তাদের কোন সার্র্টিফিকেশন বা নিয়ন্ত্রন নাই কেন?


অনেক আগে এক ইসলামী চিন্তাবিদ এক আলোচনায় বলেছিলেন, ইসলাম পন্থী ওয়াজেদের কোন মা বাপ

বা অথরিটি নাই, এ জন্য কোন নিয়ন্ত্রন নাই। একমাত্র সম্পদ হলো একটু সুর, ব্যস, তার সাথে একটা

লম্বা জুববা জোগাড় করে নিলেই হয়ে গেল, ব্যবসা জমে গেল। কেউ কেউ লাফ দিয়ে বলে উঠেন, কেন

আমাদের মা বাপ হলো কোরআন এবং সুননাহ। কিন্তু প্রশ্ন হলো কোরআন সুননাহ বুঝবে কে বা ব্যখ্যা

করবে কে?

১৯৮৭ কিংবা ৮৮ সালের কথা, ইসলামী বিশ^বিদ্যলয় ক্যম্পাস তখন গাজীপুরের বোর্ড বাজারে। ইসলামী

বিশ^বিদ্যালয় থেকে আমি এবং শিবিরের একজন বড় নেতা আমরা গিয়েছিলাম তাবলিগ জামাতের

ইজতেমায়। ইজতেমা মাঠে গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বয়ান শুনছি। বয়ানে কোরআনের একটি আয়াত

আমার মনযোগ কেড়ে নিল। সুরা তাওবার ৪১ নং আয়াত ”ইনফিরু খিফাফাও ওয়া সিকালা”। এ আয়াতের

ওয়াজ এবং বয়ান অনেক অনেক বার শুনেছি শিবির জামায়াতেুর মুখে। সেই একই আয়াতেরই বয়ান শুনছি

তাবলিগ জামায়াতের ইজতেমায়, কিন্তু পার্থক্য শুধু এক জায়গায়, সেটা হল ব্যখ্যায়। প্র্রত্যেকে

কোরআনের আয়াতকে নিজের মত করে ব্যখ্যা করেন। সুরা তাওবার ৪১ নং এই আয়াতে তাবলীগের ব্যখ্যা হলো

তোমরা আল্লাহর রাস্তায় চিল্লায় বের হয়ে যাও, তোমার চিল্লা যাবার বোঝা হালকা হোক কিংবা ভারী

হোক। আর জামায়াত শিবিরের ব্যখ্যা হলো, তোমরা জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ো, হালকা অথবা ভারী যে কোন

অবস্থায়। এখন বলুন কার ব্যখ্যাটা সঠিক। এসব দলবাজরা কথায় কথায় বলে উঠে কোরআনে আছে, বা

হাদীসে আছে, কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো তুমি যে অনুবাদটা করেছে সে অনুবাদটা কে করেছে। তুমি

যে পন্থী সে পন্থী তোমার কোন শায়খ, বা পীর কিংবা আললামা বা আমীর সাহেবের ব্যখ্যা। এমনও তো হতে

পারে এ ব্যখ্য্রাটা আল্লাহর রাসুলের ছিল না। আরেকটি উদাহরণ, সুরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে একটা শব্দ

আছে ”কুরু”। আলেমদের মধ্যে উসুলের কিতাব পড়েছেন, তারা ভাল বুঝবেন। যারা বাংলা নোটবই পড়া

মুলভী কিংবা অসুল না জানা বিরাট বক্তা তাঁদের কাছে প্র্রশ্ন, পীর, আললামা, শায়খের ব্যখ্যায় না গিয়ে,

কোন নোটবুকে না গিয়ে সরাসরি কোরআন খুলে আরবী এই ”কুরু” শব্দটির অর্থ কি হবে বলুন

তো? কোরআন এবং হাদীসে এমন হাজার হাজার শব্দ আছে, যে গুলো ইতিহাস না জেনে, আরবী সাহিত্য

না জেনে, সাহাবায়ে কেরামের ব্যখ্যা না জেনে অনুবাদ বা ব্যখ্যা করা সম্ভব নয়। আপনি যে অনুবাদ পড়ে

বা যে ব্যখ্যা করে অন্য পন্থীকে অসম্মান করছেন সে অনুবাদ বা ব্যখ্যটা আপনার পন্থী কেউ একজন করে

দিয়েছেন। আপনি বেকুবের মত তার ব্যখ্যা নিয়েই ফিতনা সৃষ্টি করছেন।

আসি আবার সেই তারাবীর বিতর্ক নিয়ে। সত্যি বলতে কি তারাবী কি ৮ রাকাত পড়বেন নাকি ১২

নাকি ২০ তাতে আমার এক বিন্দু ও মাথা ব্যথা নাই। আমি যখন যত রাকাত পড়া সম্ভব তত রাকাতই পড়ি।

আমার অলসতায় আমি বেশীর ভাগ ৮ রাকাতই পড়ি। এবং তারাবী পড়িই নাই এমনও রাত গেছে। এবং আমার

বন্ধু মহলে কেউ ৮ কেউ ২০ পড়ে। প্রশ্ন সেটা নয়, প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মুসলমানদেও ৮০% হানাফী

মাজহাবের অনুসারী। ২০ রাকাত তারাবী বাংলাদেশের চিরাচরিত ধর্মীয় সংস্কৃতি। হানাফী মাজহাব

আমাদের আপামর সাধারণ মানুষের সংস্কৃতি। আপনি তারাবী ৮ রাকাত পড়েন, বা তারাবী নাই বা পড়েন

আমার মাথা ব্যথা নাই। কিন্তু কার রিয়াল খেয়ে আপনি বাংলাদেশের হাজার বছরের ধর্মীয় সংস্কৃতিকে

ধ্বংস করতে সচেষ্ট। ইসলামের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি হাজার বছরের ইতিহাস। কোরআন আমার বা

আপনার কিংবা এ যুগের কারো উপর নাজিল হয়নি, রাসুল সাঃ এর হাদীস আমি আপনি কেউ সরাসরি

শুনিনি, আমাদের কাছে কোরআন হাদীস এসেছে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে সাহাবায়ে কেরাম,

তাবেয়ী তাবয়ে তাবেয়ীদের মাধ্যমে, যুগে যুগে ওলামা ফোকাহায়ে কেরামের গবেষনার মাধ্যমে। যুগে

যুগে হাজার হাজার কিতাব লেখা হয়েছে, হাজার হাজার গবেষনা হয়েছে। একসময় বাগদাদের

বিশ^বিদ্যলয় ছিল আজকের অক্সফোর্ড হার্ভাডের মত। কর্ডোভার মত।

আর আজ আপনি হঠাৎ করে এসে কোরআনের একটা নিয়ে এসে, হাজার বছরের গবেষনাকে তুড়ি মেরে

উড়িয়ে দিয়ে নতুন ব্যখ্যা করতে বসেছেন। অথচ আপনার অজু গোসলের খবর নাই। নাহু সরফ বালাগাত

ফাসাহাত কি সেটা জানেন না। অসুলে ফিকহ, অসুলে হাদীস, অসুলে তাফসীর জানেন না। দু চারটি

অনুবাদ করা বই পড়েই আপনি শায়খ হয়ে ফিতনা সৃষ্টি করছেন।


একটা উদাহরন দিয়ে কথাটা বললে আরেকটু স্পষ্ট হবে।

কথাটা একটু উদাহরণ দিয়ে বলি

 
 
 

Recent Posts

See All
এই বি এন পি কোন বি এন পি?

বি এন পি কি আসলে জানেন তাঁরা কি করিতেছেন? কথাগুলো বলার আগে কথাটা স্পষ্ট করে নেই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমার প্রিয় নেতাদের একজন।...

 
 
 
খালেদ মহিউদ্দিন এর শো তে এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর সাক্ষাতকার

গতকাল খালেদ মহিউদ্দিন এর শো তে এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর সাক্ষাতকার দেখছিলাম। অনেকেই হয়তো দেখেছেন। যে বিষয়টা ভাইরাল হয়েছে সেটা হলো এর আগের...

 
 
 

Comments


Contact

Never Miss a Lecture

Add your text

  • Linkedin
  • Facebook
  • Twitter
  • Instagram
  • YouTube
  • Amazon
White Structure

Never Miss a Lecture

Add your text

© 2035 by Skooled. Powered and secured by Wix

bottom of page