পাছে লোকে কিছু বলে
- AbuSayed Mahfuz
- Aug 16
- 1 min read
ঈশপের সেই বিখ্যাত গল্পটি দিয়েই আজকের সম্পাদকীয়টা শুরু করা যাক। এক বয়স্ক পিতা বাজারে যাবেন এতে তাঁর কিশোর ছেলে বায়না ধরেছে সেও বাবার সাথে বাজারে যাবে। কিন্তু বাজারে যাবার বাহন একমাত্র গাধাটি দুর্বল বিধায় গাধাটি মাত্র একজনকেই বহন করার ক্ষমতা রাখে। তাই পিতা পুত্র সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা পালা করে গাধায় চড়ে বাজারে যাবে। প্রথমেই ছেলে গাধায় চড়ার পালা। ছেলে গাধায় বসেছে আর পিতা গাধার দড়ি ধরে টানছেন। এতে রাস্তায় কিছু লোক মন্তব্য করলেন, ”হায়রে যুগ! দেখ বেয়াদব, বেতমিজ ছেলে!! বুড়ো বাপকে হাঁিটয়ে তাগড়া জোয়ান ছেলে বাবুর মত গাধায় বসে আছে। লোকজনের কথা শুনে ছেলে বাপকে বললো বাবা তুমি গাধায় চড় আমি দড়ি টানবো। বাবা তাই করলেন, এবার রাস্তায় অন্য কিছু লোকে মন্তব্য, ”হায়রে নিষ্ঠুর পিতা! জোয়ান বাপ সাহেবের মতো গাধায় চড়ে বাচ্চা ছেলেকে দিয়েছে হাটতে। এখানে এসে আগের বুড়ো বাপ হয়ে গেছে জোয়ান বাপ আর তাগড়া জোয়ান ছেলে হয়ে গেছে বাচ্চা। পিতা পুত্র এবার সিদ্ধান্ত নিলেন দু’জনেই গাধায় চড়বেন এবং তাই করলেন। এবার রাস্তার লোকের মন্তব্য, হায়রে নিষ্ঠুর মানুষ! একটা পশুর প্রতি সামান্য মায়া দয়া নেই!!
পিতা পুত্র দু’জনেই এবার গাধার দড়ি টেনে হাটতে লাগলেন, এতে রাস্তায় কিছু লোককে হাসতে লাগলেন, বললেন, দেখ দেখ, এক গাধা নিয়ে দুই গাধা হাটছে। হায়রে বিপদ, পিতা চড়লেও সমালোচনা, ছেলে চড়লেও সমালোচনা, দু’জন চড়লেও সমালোচনা, কেউ না চড়লেও সমালোচনা। মহা বিপদ দেখছি।
পিতা পুত্র এবার সিদ্ধান্ত নিলেন, গাধায় চড়ার পরিবর্তে তাঁরা দু’জনেই গাধাটার হাত পা বেঁধে তাঁরা নিজেই গাধাটাকে কাঁধে করে নিয়ে যাবেন। ওহ হো, এবার তো আরো মজা, গাধা যাচ্ছে দুই গাধার কাঁধে চড়ে। পরিশেষে পিতা পুত্র গাধাকে নদীতে ফেলে দিয়ে মানুষের সমালোচনা থেকে নিস্তার পেলেন।
এবার অন্য একটি গল্প। একই প্রতিপাদ্যের উপর। গল্পটি মরহুম আবুল খায়ের মুসলেহুদ্দীনের লেখা। গল্পটির মূল কথা এমন যে, লেখক তরুন বয়সে অপেক্ষাকৃত বয়স্কা চাচীর সাথে নিউ মার্কেট গেলেন মার্কেটিং এ। নিউ মার্কেটে দু চার জন বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা হলে আড় চোখে তাকালেও কেউ তেমন কিছু বলেনি তবে রাতে হলে এলে বন্ধু বান্ধবের টিপ্পনি, “কিরে জানতে পারি, মেয়েটি কে?“ লেখক কোন রকমেই বুঝাতে পারলেন না যে, তিনি কোন মেয়ে নয় বরং একজন মহিলা, তার চাচী। তারপর অনেক বছর পার হলো, লেখক এখন একজন প্রতিথযশা লেখক। স্ত্রী পরিবার সবই আছে। তাঁর লেখার অনেক ভক্ত আছে। একবার তাঁর মেয়ের বয়সী এক তরুনী তাঁর লেখার প্রশংসা করে ফোন করে, তারপর লেখালেখির কালাকানুন ইত্যাদি আলোচনায় লেখকের অফিসে আসেন দেখা করতে। কথা শেষে লেখক নিজেও বাইরে যাবে সাথে ভাবলেন মেয়েটিকে একটু এগিয়ে দেয়া যাক,মেয়েটিকে অফিস থেকে বেরুতে পথে অফিসে কলিগদের সাথে দেখা হলে অনেকেই আড় চোখে তাকালেন। বিকেলে লেখক অফিসে ফিরে এলে অফিসের কলিগদের টিপ্পনি, কি ব্যাপার করিম সাহেব, জানতে পারি মহিলাটা কে, লেখক বার বার বলেও বুঝাতে পারলেন না যে, তিনি এখনো মহিলা হয়ে সারেন নিতান্ত একটি বালিকা মাত্র।
তৃতীয় গল্পঃ
গল্পটি আরবি গল্পের রপান্তর। একই প্রতিপাদ্যের উপর। এক দোকানদার মিষ্টির দোকান খুলেছেন। স্বভাবতই দোকানে সাইনবোর্ড লাগালেন।
“এখানে মিষ্টি বিক্রি হয়।“
সাইনবোর্ড দেখে তাঁর এক পরিচিত বা বন্ধু এলেন, গল্প গুজবে আড্ডায় কিছু সময় ধ্বংস করলেন সাথে বিনে পয়সায় দু চারটা মিষ্টিও সাবাড় করলেন, এবার উপদেশের পালা। বললেন, আচ্ছা আপনার সাইনবোর্ডটা অনেক বেশী বড়। সাইনবোর্ডে শুধু “মিষ্টি বিক্রি হয়।“ কথা লিখলেই তো চলে। কারণ মানুষ জানে সাইনবোর্ড যেহেতু এখানে সুতরাং মিষ্টি এখানেই বিক্রি হবে। দোকানদার ভাবলেন ভাল কথাই তো, তাই তিনি এখানে শব্দটা মুছে দিয়ে সাইনবোর্ডে শুধু লিখলেন “মিষ্টি বিক্রি হয়“।
এবার এলেন অন্য প্যাচাল, আবারো কিছু সময় এবং মিষ্টির ধ্বংসযজ্ঞ। পরামর্শ এলো, আচ্ছা ”বিক্রি হয়“ শব্দ দুটো কি জরুরী? শুধু মিষ্টি শব্দটা লিখলেই তো চলে কারণ মানুষ জানবে আপনি মিষ্টি বিক্রি করার জন্য দোকান খুলেছেন ফ্রি দেয়ার জন্য নয়।
দোকানদার তাই করলেন, “বিক্রি হয়“ শব্দ দুটো মুছে দিয়ে সাইনবোর্ডে শুধু মিষ্টি শব্দটা রাখলেন।
এবার এলো তিন নম্বর মক্কেল। দোকানদারকে বললেন, আচ্ছা আপনি শুধু মিষ্টি শব্দটা লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে আছেন কেন? যারা মিষ্টি চিনে না, তারা তো ঐ সাইনবোর্ডটাকেই মিষ্টি মনে করে সাইন বোর্ডটাই চাটতে শুরু করতে পারে।
দোকানদার এবার সত্যি সত্যিই রেগে গেলেন এবং রাগ করে সাইনবোর্ডটাই নামিয়ে ফেললেন।
তিনটি গল্পেরই শিক্ষা বা প্রতিপাদ্য বিষয় প্রায় একই। আপনি যে কাজই করুন যেভাবেই করুন, কিছু লোক উপদেশ ঝাড়বেই। এরা নিজেরা কোন কাজ না করে অপরের প্রতি উপদেশ ঝাড়তে খুব ওস্তাদ। গল্প তিনটি থেকে শিক্ষার বিষয় হলো, পাছে লোকে কিছু বলে এতে কান না দেয়া।
চাপাবাজরা চাপা মারবেই, সমালোচকরা সমালোচনা করবেই। আর কর্মঠ লোকরা কাজই করে যাবে। গাধার পিঠ থেকেও নামবেনা বা অন্যের কথায় দোকানে সাইনবোর্ড ও নামাবে না।




Comments