top of page
Search

ভালবাসা ও বিচ্ছেদ

ভালবাসা এবং বিচ্ছেদ বিষয়টা কোন না কোন ভাবে চিরন্তন বাস্তবতা। একদিকে রয়েছে ভাললাগা, ভালবাসা, আবেগ, অনুভূতি, অনুরাগ, রোমান্স, দেহ মিলন, প্রেম, বিয়ে, সংসার বংশ পরম্পরা। আবার অন্যদিকে রয়েছে, তিক্ততা, ভুলবুঝাবুঝি, বিশাসহীনতা, অনা’া, অভিমান, ক্ষোভ, ক্রোধ, ছাড়াছাড়ি, বিচ্ছেদ, সংসার ভাঙ্গা।

 

                বিষয়গুলো এতই চিরন্তন যে, পৃথিবীতে সম্ভবত এতবড় বা—বতা আর কিছুতে নেই। পৃথিবীতে মানুষে মানুষে অনেক পার্থক্য রয়েছে। মানুষের বিশাসে, আচরণে, চলনে বলনে। ধর্মে, বিশাসে, আহারে, বিহারে, প্রকৃৃতিতে। কিন্তু ভালবাসা আর বিচ্ছেদে কোন পার্থক্য নেই। পৃথিবীর আদি মানব থেকেই যে বা—বতায় কোন পার্থক্য নেই। বলা হয়ে থাকে যে, আলাহ পাক আদমকে সৃষ্টি করার পর তারপর বিবি হাওয়াকে সৃষ্টি করেছিলেন। আদম তখন ঘুমে ছিলেন। ঘুম থেকে জেগে আদম তার পাশে একজন নারীকে  দেখে টেনে নিতে চাইলেন, সাথে সাথেই আলাহর বাণী এলো হে আদম তুমি বিয়ে ছাড়া এ নারীকে গ্রহন করতে পারবেনা। কথাটার সত্যতা কোরআন হাদীসে আছে কিনা বা বা—বতা কতটুকু নিশ্চিত বলা কঠিন। তবে ব্যাপারটা úষ্ট যে, বিবি হাওয়াকে ছাড়া আদম ছিলেন নিঃসঙ্গ, বড়ো একা। তাই হাওয়াকে দেখেই তিনি কাছে পেতে চেয়েছিলেন। যাতে মুলত মানব প্রকৃতির বা—বতা ফুটে উঠেছে। ভালবাসার জন্য কোন ভাষার প্রয়োজন হয় না। বাংলায় সেই গান আছে না, “চোখ যে মনের কথা বলে, চোখে চোখ রাখা শুধু নয়, চোখের সে ভাষা বুঝতে হলে চোখের মত চোখ থাকা চাই”। তেমনিভাবে ভাষাহীন শব্দহীন ভালবাসাকে বুঝতে হলে ভালবাসার মত একটি মন থাকা চাই।  ভিন্ন দেশের, ভিন্ন সং‹ৃতির, ভিন্ন বিশাসের, ভিন্ন ভাষার দ’ুটি জীবের মাঝেও ভালবাসা হতে পাওে যদি ভালবাসার মত মন থাকে।

 

                ভালবাসার ত্রিভুজ বড়ই জটিল। পৃথিবীতে অনেক অনেক অঘটন ঘটে এই ভালবাসার ত্রিভুজে পড়ে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম যে সন্ত্রাস এবং খুন সংঘটিত হয়েছিল হাবিল আর কাবিলের মধ্যে তার পেছনেও কিন্তু এই ভালবাসার ত্রিভূজ জড়িত। আজো পৃথিবীতে যতগুলো সন্ত্রাস, রাহাজানি, খুন সংঘটিত হয় তার অনেকগুলোরই পেছনে হয়তো, অর্থ নয়তো প্রভাব বি—ার কিংবা ভালবাসার বিষয় জড়িত।

                কত রাজা যে তাদের সিংহাসন ছেড়েছেন এই ভালবাসার কারনে তার কোন হিসাব নাই। ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল এই প্রেম বিরহের কারণে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন, ইন্দোনেশীয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ, ফিলিপাইনের মার্কোস, বাংলাদেশের এরশাদসহ কত রাজাধিরাজরা এভাবে প্রেমে জড়িয়ে বিতি কেচ্ছার জন্ম দিয়েছেন।

 

                এমনকি ভালবাসাটা এমনই চিরন্তন যে, এটা শুধু মানুষের মাঝে নয় সৃষ্টির সকল কিছুর মধ্যেই এই প্রেম ভালবাসা বিদ্যমান। গরুর বাছুর মায়ের কাছে এলে মা বাছুরের গায়ে জিব দিয়ে আঁচল কেটে ভালবাসার প্রকাশ ঘটান। মা মুরগী সারাক্ষণ মুরগী ছানাকে ঘিরে থাকেন। কাক বা কোন আমনকারী এলেই ুদ্ধ হয়ে উঠেন, প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আবার একটা ষাঁড় অন্য রকম ভালবাসায় বিভোর হয়েই গাভীর পেছনে ঘুর ঘুর করেন। ভালবাসা আছে মাকড়সার মধ্যে, পিপীলিকার মধ্যে। সৃষ্টি জীবের অনেক প্রাণীর মধ্যেই ভালবাসার টানেই ঘর সংসার পাতার প্রবণতা রয়েছে। পাখি মানুষের মতই বাসা বানায়। সংসার পাতায়। ভালবাসাটা আবার থাকতে পারে অন্য কোন প্রাণীর প্রতি। শরৎ চন্দ্রের মহেষ গল্প থেকে আমরা বুঝতে পারি একটা নির্বাক পশুর প্রতি মানুষের কত ভালবাসা থাকতে পারে। আবার ভালবাসা থাকতে পাওে কোন জড় ব‘র প্রতি। শুনেছি আগের যুগের কোন একজন ইমাম (ইসলামী পুরোহীত) নাকি তার অনেকদিনের একটি ব্যাবহার্য ব‘ ভেঙ্গে যাওয়াতে কেঁদেছিলেন। অনেকদিনের ব্যাবহার্য্য এ ব‘টাকে তিনি এমনই ভালবেসে ফেলেছিলেন।

 

ভালবাসাটা আসলে কি?

                ভালবাসাটা একটা জটিল বিষয়। ভালবাসার সংজ্ঞা বিভিন্ন প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আবার ভালবাসার প্রকাশ ও বিভিন্ন হয়ে থাকে। ভালবাসা কোন কোন —রে গিয়ে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এক বুক জ্বালা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়, গান গায় ভালবেসে গেলাম শুধু ভালবাসা পেলাম না। আবার কোন কোন পর্যায়ে গিয়ে নিজের জীবন দিতে পারে, কোন —রে গিয়ে দৈহিক মিলনে যেতে পারে আবার ভালবাসার কোন —রে গিয়ে হিংসা বা ােধের বশবর্তী হয়ে খুনের ও জন্ম দিতে পারে।

                এই ভালবাসা নিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে আলোচনা পর্যালোচনা, রচনা, গবেষনা, গল্প কবিতার কোন শেষ। গল্প উপন্যাস মানেই প্রেম, ভালবাসা। ধর্ম ও এ ব্যাপারে অগ্রগামি। প্রতিটি ধর্মেরই মূল মর্মবাণী হলো ভালবাসা। ভালবাসার প্রতি আবার জোর ও দেয়া হয়েছে বার বার যুগে যুগে সকল মনীষিই। বাইবেলে বারবার ভালবাসার কথা বলা হয়েছে। ইংরেজীতে আছে, হি প্রেইথ বেস্ট হু লাভড বেস্ট। অর্থাৎ যার মধ্যে যত বেশী ভালবাসা আছে সে ততবেশী ইবাদত করেছে। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ”তুমি নিজের জন্য যা ভালবাসো, মানুষের জন্য তাই ভালবাসো তাহলেই তুমি প্রকৃত মুমিন হতে পারবে।” অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, “যে ব্যাক্তি নিজে খায় অথচ তার প্রতিবেশী উপোষ করে সে মুমিন হতে পারে না”। হাদীসের এই উক্তিটিও কিন্তু ভালবাসারই অভিব্যাক্তি। মানুষের প্রতি ভালবাসা।

                এ জন্যই বলতে হয় ভালবাসাটা জটিল। ভালবাসাটা জটিল কেন বলছি আরো শুনুন। কথা আছে, অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। প্রেমিক প্রেমিকা একজন আর একজনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ”ও গো তোমার চোখে আমি সারা পৃথিবী দেখতে পাচ্ছি।” ”তোমাকে ছাড়া আমি বাচবোনা।” সেই প্রেমিক প্রেমিকাই যখন একবার ঝগড়ায় অবতীর্ণ হয় তখন যে কি অব’া সে ব্যাপারে নাবালক কিশোর ছাড়া কাউকে বলার প্রয়োজন নেই।

তাহলে ভালবাসাটা আসলে কি? এর কি কোন সংজ্ঞা নেই। সমাজ বিজ্ঞানীরা মোটামুটি একটা সংজ্ঞা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন এভাবে। ভাল লাগা এবং ভালবাসা হলো দু’জন লোকের সমন্বিত চিন্তা। কথাটা আরো সহজ করে বলতে গেলে বলতে হবে। দু’জন লোকের চাওয়ার ঐক্যতা। দু’জন লোকের চাওয়ার মধ্যে যতগুলো আইটেম কমন থাকবে তাদের ভালবাসা তত গভীর হবে। একজন যুবক এবং যুবতীর মধ্যে সাধারনত একটা চাওয়া কমন থাকে। আর সেকারণেই পৃথিবীর সকল যুবক যুবতী একে অপরকে একটা বিষয়ে ভালবাসে আর তা হলো দৈহিক সেীন্দর্য্য। কিন্তু সে একটা বিষয়ে চাওয়া এবং পাওয়ার সময় যখন ফুরিয়ে যায় তখনই ধরা পড়ে অন্যান্য চাওয়ার হিসাব নিকাশ।

                এই চাওয়ার তালিকায়  যে কোন কিছু থাকতে পারে। রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের প্রতি পছন্দ বা অপছন্দ। কোন আদর্শের প্রতি। কোন বিশাসের প্রতি। এমনকি চলন বলন ও হতে পারে। ঐ লোকটা যেভাবে হাঁটে তা আমার পছন্দ নয় কিন্তু অন্য কিছু লোক আছে, যাদের কাছে আমার অপছন্দনীয় হাটাটা তাদের কাছে খুবই প্রিয়। এ বিষয়টাতেও আবার আরেকটু জটিলতা আছে। বিষয়টা আবার কিছুটা নির্ভর কর্ েসংশিষ্ট ব্যাক্তির দৃষ্টি সীমার উপর।

                কথাটাকে জটিলতায় না নিয়ে সহজ করে বলতে গেলে দুজন লোকের মধ্যে দৃষ্টিভংগির মধ্যে যত বেশী সামন্জস্যতা থাকবে তাদের ভালবাসা তত গভীর হবে। দৃষ্টিভংগির এই সামন্জস্যতা নির্ভর করবে দ’ুজনের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, বুদ্ধি বয়স এবং মেধার উপর। দুজন লোকের একই লেভেলের শিক্ষা বা ডিগ্রী থাকার পরও তাদের মধ্যে বিরাট পার্থ্যক্য থেকে যেতে পারে অন্য কারণে। তেমনিভাবে, একই বয়সের দু’জনের মাঝেও দৃষ্টিভংগির বিরাট তারতম্য থাকতে পারে।

               

                সে যাক, আবার ফিরে আসি সেই চাওয়ার ঐক্যতা নিয়ে। মনে করুন একজন যদি শহর জীবন যেমন বড় বড় দালান কোঠাকে খুব ভালবাসে আবার অন্যজন ভালবাসে প্রকৃতিকে যেমন পাহাড় নদী, হ্রদ, গাছ পালা। তাহলে ঐ দুজন লোকের মধ্যে ভালবাসার ঐক্যতে ঐ পয়েন্টে কমে যাবে। তবে এর অর্থ এ নয় যে, একজন প্রকৃতি ভালবাসে আবার অন্যজন মানব সৃষ্টিকে ভালবাসেন বলেই তাদের মধ্যে ভালবাসা হতে পারে না। হতে পারে এই পয়েন্টে তারা জিরো পাবেন কিন্তু হতে পারে অন্য পয়েন্টে তারা একশ তে একশ পেয়ে যাবেন। মনে করুন দু’জনই দৈহিক সেীন্দর্যতে খুব আকৃষ্ট। এবং দু’জনই খুবই সুদর্শন এবং সুন্দরী। এ ক্ষেত্রে অন্য পয়েন্টে তারা শুন্য পেলেও তাদের দুজনের মধ্যে ভালবাসা হতে পারে।

 


 
 
 

Recent Posts

See All
এখানে মিষ্টি বিক্রি হয়।

ঈশপের  সেই বিখ্যাত গল্পটি দিয়েই আজকের সম্পাদকীয়টা শুরু করা যাক।  এক বয়স্ক পিতা বাজারে যাবেন এতে তাঁর কিশোর ছেলে বায়নাধরেছে সেও বাবার সাথে...

 
 
 

Comments


Contact

Never Miss a Lecture

Add your text

  • Linkedin
  • Facebook
  • Twitter
  • Instagram
  • YouTube
  • Amazon
White Structure

Never Miss a Lecture

Add your text

_London trip in Bangla.pdf

bottom of page