মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি
- AbuSayed Mahfuz
- Aug 16
- 1 min read
আজ শুক্রবার। আলহামদুলিল�াহ, আজ শুক্রবার। থ্যাঙ্কস গড ইটস ফ্রাইডে।
একই কথা তিনটি অভিব্যাক্তিতে প্রকাশ। কারো দৃষ্টিতে আজ শুক্রবার জাস্ট এ নিউজ। কারো দৃষ্টিতে শুক্রবার জুমাবার, নেকের দিন। আবার কারো দৃষ্টিতে থ্যাঙ্কস গড, কারন সপ্তাহের শেষ দিন। শনি রবি কাজ নাই, আজ রাতে একটু ফুর্তি করা যাবে।
এ বিষয়ে আলোচনাটা একটা গল্প দিয়ে শুরু করলে কেমন হয়। গল্পটা এমনঃ ”বাংলাদেশের কোন এক গ্রামের বাজার থেকে রাতের বেলায় তিন পথিক বাড়ি যাচ্ছিলেন। এই তিন পথিকের একজন ছিলেন মুসলমান হুজুর বা মিয়াসাব, দ্বিতীয় জন ছিলেন হিন্দু পুরোহীত আর তৃতীয়জন ছিলেন ্একজন দর্জি। গ্রামের পথ দিয়ে যেতে যেতে তিন জনই একটা পাখির ডাক শুনতে পেলেন। তখন তাঁরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করলেন পাখিটা কি বলছে। প্রথমেই হুজুরকে জিজ্ঞাসা করা হলে হুজুর বললেন, পাখিটি বলছে ”আল�াহ রসুল হজরত”। তারপর হিন্দু পুরোহিতকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন যে পাখিটি বলছে, ”রাম নারায়ন দশরথ”। আবার যখন দর্জিকে জিজ্ঞাসা করা হলো দর্জি বললেন যে, পাখিটি বলছে, ”সুঁই সুতা টগরত”। তিনজনেরই ব্যাখ্যায় ছন্দের দারুন মিল আছে। হুজুর চিন্তা করেছেনে আল�াহ রাসুল হজরত কারন তিনি সারাক্ষণ এটা নিয়েই জপ করেন, হিন্দু পুরোহিত রাম নারায়ন আর দশরথ তার প্রার্থনা, আর দর্জি ব্যাটা তো সর্বক্ষণ সুঁই, সুতা আর টগরত নিয়েই থাকেন।
কথাটার আরেকটু ব্যাখ্যায় যাবার আগে পাঠকদেরকে আমরা আরেকটা উদাহরণের দিকে নিয়ে যাব। উপরের ছবিটা দিকে একটু তাকান তো? বলুন তো এটা কিসের ছবি? হ্যাঁ, আপনি হয়তো ঠিকই ধরেছেন এটা একটা মেয়ে মানুষের ছবি। তবে এই মেয়ে মানুষটার বয়স কতে হবে?
১৫? ১৬?১৮? নাকি ৮০? ৯০? ৯৫? আসলেই এর যে কোনটিই হতে পারে তাই নয় কি? ছবিটি একটি বিখ্যাত ছবি। এ ছবিটি নিয়ে একবার হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে আলোচনা হয়েছিল। ছবিটি কি ১৫-২০ বছরের কোন তরুনীর নাকি ৯০-৯৫ বয়সী কোন বৃদ্ধার এ নিয়ে। এ একই ছবিটি দু’ দিক থেকে দেখলে দুরকম মনে হয়। বাম উপর কোন থেকে দেখতে শুরু করলে ছবিটি দেখে মনে হবে এক কিশোরী বা তরুনীর ছবি। আবার ডান পাশ বা নীচ থেকে তাকালে মনে হতে পারে এটা কোন বৃদ্ধার ছবি।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছবিটির আগে শিক্ষক কèাসের দুপাশে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে দুধরনের দুটি ছবি দেখান। এতে দেখা গেছে, আগের ছবি দেখার পর ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন হয়েছে।
মুল কথা হলো, একজন মানুষ একটা বিষয়কে সেভাবেই দেখে যেভাবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।
মনে করুন এই যে, বাংলাদেশের আলোড়ন সৃষ্টিকারি ঘটনা শেখ আবদুর রহমান আর বাংলা ভাইকে পাকড়াও করার ঘটনা। হিসাবটা খুবই সহজ। যিনি বি.এন.পি বা জাময়াতের রাজনীতি করেন বা করতেন তিনি তো সরকারের কৃতিত্বে আতœহারা। কারন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন। আবার যিনি আওয়ামী লীগ করেন বা করতেন কিংবা আওয়ামী ঘরানার পত্রিকার পড়ে অভ্যস্ত তাঁর দৃষ্টিতে এটা একটা সাজানো নাটক। কারণ হাসিনা বলেছেন এটা সাজানো নাটক।
আমেরিকায় দু’দিনে ঈদ করা নিয়ে আমার এক জ্ঞানী বন্ধু মজা করে বলেছেন, ”এটাতে আবার আশ্চর্যের কি হলো?” তিনি আরো বলেন, ”আমি সোজা বলে দিতে পারবো আগামী বছর কোন মসজিদে কবে রোজা শুরু হবে বা ঈদ করা হবে।” কারণ সমস্যাটা তো চাঁদ দেখা বা না দেখা নিয়ে নয়। সমস্যাটা হলো কোন মসজিদের গুরু কে। জামায়াতী মসজিদ হলে একরকম আর তবলীগি হলে আরেক রকম।
মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কৃষন চন্দের আরেকটি মজার গল্প রয়েছে, গল্পটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ অন্যকে নিজের স্বার্থের জন্য ব্যাবহার করতে চায়। গল্পের বিষয়টা এরকম যে, ঢাকা শহরে এক ব্যাক্তি হেটে নিউ মার্কেট রওয়ানা হলেন। রাস্তা না চিনে এক ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি নিউ মার্কেট যাবেন কিভাবে? তখন ডাক্তার ঐ ব্যাক্তিকে তাঁর চেম্বারে নিয়ে অনেক্ষণ পরীক্ষা করলেন, জানতে চাইলেন কেন তাঁর নিউ মার্কেট যেতে মন চায়। কোন কোন সময় তাঁর নউ মার্কেট যেতে মন চায়, সকালে না বিকেলে। খাবার আগে না পরে। নিউ মার্কেট যেতে ইচ্ছে করার আগে বা পরে তাঁর পেটে ব্যাথা করে কিনা। গলায় চুকা পানি আসে কিনা। কতদিন থেকে তাঁর নিউ মার্কেট যেতে মন চাইছে।
ডাক্তার থেকে কোন প্রকারে নিস্তার পেয়ে লোকটি পল্টন ময়দানে বক্তৃতারত এক কথিত জনদরদী নেতার কাছে জানতে চাইলেন যে তিনি নিউ মার্কেটে কিভাবে যাবেন। জনদরদী নেতা ঐ ব্যাক্তির প্রশ্ন শুনেই তাকে কোন উত্তর না দিয়েই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, দেখুন ভাইসব, আমাদের এই সভায় এক নিরীহ মানুষ নিউ মার্কেট যেতে চাইছেন কিন্তু এই স্বৈরাচারী সরকার এই নিরিহ মানুষটিকে নিউমার্কেট যেতে দিচ্ছেন না। এবং সরকারের সমালোচনা শুরু করলেন।
লোকটি তখন বিফল মনোরথ হয়ে এক সাংবাদিকের কাছে গেলেন, নিউ মার্কেট কোন পথে যেতে হবে এটা জানার জন্য, সাংবাদিক বন্ধুটি সাথে সাথে লোকটির কয়েকটি ছবি তুললেন। অনেক্ষণ যাবত তাঁর সংগ্রামী জীবনের সাক্ষাৎকার নিলেন। জানতে চাইলেন তিনি কতক্ষণ যাবত এভাবে রাজপথে হেটে বেড়াচ্ছেন আর নিউ মার্কেটের রাস্তা খুজেঁ বেড়াচ্ছেন। অথচ একটি লোকও তাঁকে নিউ মার্কেট যাবার পথটা বাতলে দিচ্ছেন না। পরিশেষে আশ্বাস দিলেন যে, তিনি আগামি কালকের পত্রিকায়ই তাঁর ছবিসহ সংবাদ ছাপবেন। জাতিকে জানতে দিবেন যে তিনি নিউ মার্কেট যেতে চাইছেন কিন্তু কেউ তাঁকে সহযোগীতা করছেন না।
এবার লোকটি এক মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাবলেন হয়তো ইমাম সাহেব আল�াহ ওয়ালা মানুষ ইমাম সাহেব নিঃসন্দেহে তাঁকে সঠিক পথটি বলে দিবেন। ইমাম সাহেব লোকটিকে হুজরায় ডেকে নিলেন। জিজ্ঞেস করলেন তিনি নামাজ পড়েছেন কিনা? সালাতুল হাজাত পড়েছেন কিনা। ইস্তেখারা করেছিলেন কিনা। পরিশেষে ইমাম সাহেব অত্যন্ত মোহব্বতের সাথে চোখের পানি দিয়ে তাঁর জন্য দোয়া করলেন। আল�াহ তুমি এই পথহারা লোকটাকে পথ দেখিয়ে দাও। আল�াহ আমার এই ভাইটিকে তুমি নিউ মার্কেটে যাবার ব্যাবস্থা করে দাও।
সম্পাদকীয়টি বাংলা আমার সাপ্তাহিক বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠকদের অনুরোধের পুনঃ প্রকাশিত হলো।




Comments